স্বীয় প্রতিভায় মহিমান্বিত ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার (জন্মঃ ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮) বাংলাদেশের একজন অনন্য-সাধারন চিত্রশিল্পী এবং বিদ্যাভিমানী। শিল্পের বহুমুখী শাখায় বিচরনকারী এই শিল্পী একাধারে চিত্রকলা ও ছাপচিত্রের বিভিন্ন মাধ্যমে চর্চার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের প্রাচ্যকলা চর্চার অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব তিনি। ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার তাঁর শিল্পকর্মে ঐতিহ্য এবং প্রগতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে তথাপি সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা অক্ষুন্ন রেখে বাংলাদেশের শিল্পকলাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করতে অভিপ্রেত ছিলেন।
শিক্ষা জীবনে ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বিএফএ ও এমএফএ, এবং ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাট ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।শিল্পী ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার তাঁর শিল্পকর্মে আনন্দ,সৌন্দর্য, ও প্রসন্নতার অন্বেষণ করেছেন নারীমূর্তি, ফুল-লতা-পাতা, চন্দ্রালোকিত রাত, ইত্যাদি বিষয়বস্তুর ভূয় চিত্রণে; কিন্তু জীবন অভিজ্ঞতার উৎপীড়ন বারবার ফুটে উঠেছে শিল্পীর কর্মে। বিশেষত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংস ও ভয়াবহতা শিল্পীকে গভীরভাবে অনুরণিত করে যার প্রভাব পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষাদময় বিষয়বস্তুর প্রতীকী ও বিমূর্ত উপস্থাপনা, যথা- বুলেটের গর্ত,মৃত্যুদৃশ্য, ইত্যাদির চিত্রণে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর শৈল্পিক শৈলীতে প্রাচ্যের ঐতিহ্যগত ও প্রতীচ্যের আধুনিক শৈলী ধারার মেলবন্ধন; এবং উজ্জ্বল ও মৃন্ময় রঙের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাবেশ লক্ষনীয়।
চিত্রকর্মের পাশাপাশি ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চার অন্যতম একজন উদ্যোক্তা। শিল্পচর্চার পাশাপাশি তিনি সমানভাবে শিল্পকলা-বিষয়ক লিখনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি প্রায় ২২ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার অধিকাংশই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। পেশাগত জীবনে ড. মোঃ আব্দুস সাত্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন, এছাড়া চারুকলা অনুষদের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও হল প্রভোস্ট এর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০ এর অধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছেন, এবং তাঁর শিল্পকর্ম বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১৩টি সংগ্রহশালায় সংগৃহীত হয়েছে। শিল্পকলায় অসমান্য প্রতীভার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৩টি গ্র্যান্ড পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছেন।